মানব সভ্যতার উপর আল্লাহর গজবের কিছু ইতিহাস।

আর অবশ্যই আমি তোমাদের পূর্বে বহু প্রজন্মকে ধ্বংস করেছি, যখন তারা যুলম করেছে। আর তাদের নিকট তাদের রাসূলগণ প্রমাণাদিসহ আগমন করেছিল, কিন্তু তারা ঈমান আনার ছিল না। এভাবে আমি অপরাধী কওমকে শাস্তি প্রদান করি।[1]তাকিয়ে দেখ নুহ আঃ এর সম্প্রদায়ের প্রতি, তারা তার নবুয়তের অস্বীকার করল আর অহংকার করল আর ইমানদারদেরকে তাচ্ছিল্য করল। আল্লাহ তায়ালা গোটা জাতিকে মহা প্লাবনে নিমজ্জিত করলেন।আর ইমানদারদেরকে বাচিয়ে দিলেন।[2]

তাকিয়ে দেখ সালেহ (আ.)-এর সামুদ সম্প্রদায়ের পরিণতি, তারা ছিল শিল্প ও সংস্কৃতিতে পৃথিবীতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু তাদের জীবনযাপনের মান যতটা উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছেছিল, মানবতা ও নৈতিকতার মান ততই নিন্ম পর্যায়ে নেমে গিয়ে ছিল। কুফর, শিরক, পৌত্তলিকতা, অন্যায় ও অবিচারে সমাজ জর্জরিত হতে থাকে। সালেহ (আ.) তাদেরকে আল্লাহর জান্নাতের পথে দাওয়াত দিলেন এতে অল্প কিছু সঙ্গী ছাড়া গোটা জাতি তার অবাধ্যতা করল। আল্লাহ পাকের আজাব তাদেরকে গ্রাস করে নিল।[3] وَأَخَذَ الَّذِينَ ظَلَمُواْ الصَّيْحَةُ فَأَصْبَحُواْ فِي دِيَارِهِمْ جَاثِمِينَ আর ভয়ঙ্কর গর্জন পাপিষ্ঠদের পাকড়াও করল, ফলে ভোর হতে না হতেই তারা নিজ নিজ গৃহসমূহে উপুর হয়ে পড়ে রইল।[4]

তাকিয়ে দেখ লুত (আ.)-এর জাতির প্রতি, তারা ছিল বিকৃত পাপাচারে অভ্যস্ত। সমকামিতার জঘন্য অপকর্ম তারা প্রকাশ্যে করে আনন্দ লাভ করত। লুত (আ.)তাদেরকে ইমানের দাওয়াত দিলেন তারা সিমালঙ্ঘন করল। পরিনামে আল্লাহর গজব এ জাতিকে পাকড়াও করল, এক শক্তিশালী ভূমিকম্প পুরো নগরটি সম্পূর্ণ উল্টে দেয়। ঘুমন্ত মানুষের ওপর তাদের ঘরবাড়ি আছড়ে পড়ে। পাশাপাশি আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো কঙ্কর নিক্ষিপ্ত হতে থাকে।[5]

আর দেখ হুদ (আ.)-এর আদ জাতির পরিণতি, সুরম্য অট্টালিকা ও বাগান তৈরিতে তারা ছিল উন্নত। নির্মাণশিল্পে তারা ছিল জগৎসেরা। জ্ঞান-বিজ্ঞানে তারা যেমন ছিল অগ্রসর, তেমনি সংস্কৃতিতেও অনন্য। তাদের তৈরি ইরাম-নগরীর মতো অনিন্দ্য সুন্দর পৃথিবীর আর কোন শহর ছিল না। এই উন্নত জীবন তাদেরকে অহংকারী বানাল। তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা যে আল্লাহই তাদের দিয়েছেন, তাও তারা বেমালুম ভুলে গেল। আদ জাতির লোকদের সতর্ক করার জন্য আল্লাহ হযরত হুদ (আ.)-কে পাঠালেন। তারা তার দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করল।পরিনামে আল্লাহর আজাবকে তারা অপরিহার্য করে নিল। দেখা দিল প্রচণ্ড খরা। তিন বছর তারা দুর্ভিক্ষের মধ্যে কাটাল। তারপরও তাদের স্বভাব-চরিত্রে কোনো পরিবর্তন আসলো না। তারপর আল্লাহ পাক পাঠালেন ভয়ানক ঝড়। এই ঝড় সাত রাত ও আট দিন ধরে চলল। ফলে গোটা আদ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো। আল্লাহ পাক হযরত হুদ (আ.) ও তার অনুসারীদের রক্ষা করলেন।[6]

যারাই আল্লাহ প্রদত্ত আম্বিয়া আলাইহিমুসসালামদের শিক্ষার বিরোধিতা করেছে(২) সীমাহীন পাপাচারে লিপ্ত হয়েছে (৩) মানুষের উপর যুলুম করেছে আল্লাহ পাকের ভয়ংকর আজাব তদের ভাগ্যে অবধারিত করেছে। সারকারে দু,আলম মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ যখন বিশ্ববাসীর জন্য মুক্তির পয়গাম নিয়ে আসলেন আবু লাহাব, উতবা শায়বা, মুগিরা সম্রদায়গন প্রচণ্ড অহংকারে রাসুলের শিক্ষার বিরুধিতা করল আল্লাহ পাক তাদের দুনিয়া আখেরাতের জিন্দেগিকে ধূলিসাৎ করে দিলেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের শিক্ষা নেয়ার তাওফিক দান করুন।

[1] সুরা ইউনুস, আয়াত নং, ১৩

[2] সুরা হুদ। আয়াত নং, ৩৭, ৩৮, ৩৯।

[3] সুরা হুদ।

[4] সুরা হুদ। আয়াত নং ৬৭।

[5] কুরআন, সুরা নং, ১৫,২৬,২৯ এবং ৬৬।

[6] আল কুরআন, সুরা নং, ১১, (৫০-৬০)

লেখা: মোঃ খালেদ হোসেন।

Rate this post