রাসুলকে জীবন থেকেও বেশি ভালোবাসার অর্থ

যদি কোন মজলিসে বা অন্য কোথাও জিজ্ঞাসা করা হয় আপনারা কি প্রিয় নবীকে ভালোবাসেন তাহলে সকলেই হাত তুলবে বা দাবি করবে যে ভালোবাসি, কিন্তু প্রায়শই, এ দাবির সাথে অনেকের ব্যাক্তি জীবনের মিল পাওয়া যায় না। এখন, ব্যাক্তি তার জান, তার পিতা, তার সন্তান ও সব মানুষ অপেক্ষা রাসুলকে বেশি ভালোবাসার অর্থ কি?
পিতা, সন্তান এবং অন্য সকল মানুষের চেয়ে রাসুলকে বেশি ভালোবাসার অর্থ হলো, কোন বিষয়ে আমার পিতা বা সন্তান আমাকে বলছেন, তুমি এ কাজটা এভাবে কর কিন্তু আমি দেখলাম রাসুল বলছেন না, তুমি এটা এভাবে কর না। এখন এমন মুহুর্তে আমি কি আমার পিতা বা সন্তানের চাওয়াকে বেশি প্রাধান্য দিলাম নাকি রাসুলকে বেশি প্রাধান্য দিলাম সেটাই নির্ণয় করবে আমি পিতা, সন্তান এবং অন্য সকল মানুষের চেয়ে রাসুলকে বেশি ভালোবাসি কিনা।
ঠিক তেমনি ভাবে আমার মন বলছে আমি এটা করব, কিন্তু রাসুল বলছেন না তুমি এটা কর না। এখন আমি যদি আমার মনকে দমিয়ে রেখে রাসুলের কথা শুনি তবেই আমি আমার নিজের জীবন থেকে রাসুলকে বেশি ভালোবাসি।
একবার হজরত ওমর ফারুক (রা.) রাসুলকে ﷺ বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আমার কাছে সবকিছুর চেয়ে বেশি প্রিয়, কেবল আমার জান ছাড়া।’ রাসুল ﷺ বলেন, ‘সে সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন, যতক্ষণ না আমি তোমার জীবন থেকেও প্রিয় হব ততক্ষণ তুমি পূর্ণ মু‘মিন হতে পারবে না।
রাসুল ﷺ-এর এই কথাটি ওমর (রা.) এর মনে বিদ্যুতের মতো স্পর্শ করল, এবং তখনই বুঝতে পারলেন এবং তার মনকে পরিবর্তন করে বললেন, ‘খোদার কসম, আপনি এখন আমার জানের চেয়ে বেশি প্রিয়।’ রাসুল ﷺ বললেন, ওমর, এখন তোমার ঈমান পরিপূর্ণ হলো। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৬৬৩২)।
নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, যাকাতের উপর রাসুলের প্রতি ভালোবাসা ব্যাক্তির জান্নাত নিশ্চিত করে। হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, এক সাহাবি রাসুলের দরবারে এসে জিজ্ঞেস করেন— ‘কিয়ামত কবে?’ রাসুল ﷺ জানতে চাইলেন ‘তুমি এর জন্য কী কী প্রস্তুতি নিয়েছ?’, সাহাবি বললেন, ‘আমি অধিক পরিমাণে নামাজ, রোজা, যাকাত, সদকা আদায় করে কোনো প্রস্তুতি তো নিতে পারিনি, কিন্তু আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি আমার ভালোবাসা আছে।’ রাসুল ﷺ তখন বললেন, ‘তুমি তার সাথেই থাকবে যাকে তুমি ভালোবাসো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস ৬১৭১)।
আর তাই বলা যায়, জান্নাত পাওয়া খুবই সহজ। মাত্র দুই কদম আগালেই জান্নাত। প্রথম কদম ‘মন চাহি’ জীবনের উপর ফেলে রাসুলকে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবেসে দ্বিতীয় কদমেই জান্নাতের সুউচ্চ স্থান।
Rate this post