ইমাম শাফেয়ি রচিত আহলে বাইতের শানে কবিতা

হাদীসের ভাষায় আহলে বাইত তথা নবি পরিবার দ্বারা আলী ও ফাতিমা রাদ্বিইয়াল্লাহু আনহুমা এবং হাসান ও হুসাইন রাদ্বিইয়াল্লাহু আনহুমাকে বুঝানো হয়েছে। জান্নাতের দুই সরদার হাসান-হুসাইন রাদ্বিইয়াল্লাহু আনহুমার বংশধারাও এর অন্তর্ভূক্ত। কুরআন-হাদীসে আহলে বাইতের প্রতি মুহব্বত রাখা ও তাদেরকে অনুসরণ করার আদেশ পাওয়া যায়। কিন্তু নবিপরিবারকে কেন্দ্র করে অতীত থেকেই বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি হচ্ছে প্রচুর। অনেকেই মুহাব্বাতের নামে বাড়াবাড়ি করে। এটি অপরাধ। আর যারা ছাড়াছাড়ি করে তারা বাড়াবাড়িতে লিপ্ত গোষ্ঠীকে রুখতে যেয়ে আহলে বাইতের মুহাব্বাতকে প্রত্যাখ্যান করে এবং যারাই আহলে বাইতকে মুহাব্বাত করে তাদেরকে ওদের সাথে মিলিয়ে রাফেযি (সীমালঙ্ঘন কারী বাতিল ফিরকা) বলে অপবাদ দেয়। এটিও মারাত্মক অপরাধ। আমাদেরকে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি না করে মধ্যমপন্থি উম্মাত হতে হবে। সীমালঙ্ঘন কারীদের রুখতে গিয়ে আহলে বাইতের প্রতি বেইনসাফি করা যাবে না। অর্থাৎ আহলে বাইতের প্রতি আমরা এমন মুহাব্বাত লালন করব যা কুরআন-সুন্নাহ সমর্থন করে। যে মুহাব্বাত লালন করেছিলেন সাহাবি, তাবেয়ি, আতবাউত তাবেয়ীন, আয়িম্মায়ে কেরাম এবং হক্বপন্থি সালাফ তথা পূর্বসুরী উলামায়ে কিরাম। আহলে বাইতের মুহাব্বাত সম্পর্কে ফিকহে শাফেয়ির প্রবর্তক ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ এর কবিতা সংকলনে অনেক পঙক্তিমালা রয়েছে। যিনি মাযহাবের অনুসারী কিংবা বিরোধী সবার কাছেই নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচিত। নিম্নে আহলে বাইতের শানে উনার কয়েকটি কবিতা তুলে ধরছি।

★ |→ নবি পরিবারকে মুহাব্বাতের আবশ্যকতা এবং তাদের মর্যাদা-

یَا آلَ بَیتِ رَسولِ الله حُبُّکُمُ
فَرضٌ مِنَ الله فی القُرآنِ أنزَلَهُ
یکَفیکُم مِن عظیمِ الفخر أنّکُم
مَن لَم یُصلِّ عَلَیکُم لَا صَلَاةَ لَه

হে আহলে বাইতে রাসুল (সা.)! আপনাদের মহব্বতের মাক্বাম তো এমন–
আল্লাহর নাযিলকৃত কুরআন থেকে যা ফরজ সাব্যস্ত হয়েছে।
আপনাদের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণায় এটাই কাফি যে, আপনারা এমন জাত,
কেউ দরূদ পাঠে আপনাদের ভাগ না দিলে তার দরূদ পড়াই পূর্ণ হয় না।

★ |→ নবি পরিবারের মুহাব্বাতই মুক্তির সম্বল-

آلُ النَّبــــیِّ ذَریــــــعَتی
وَ هُــــم إلَیهِ وَسیــــلـَتی
أرجُو بِهِــــم أُعطَی غَداً
بِیَدِ الیـــَمینِ صَحیـــفَتی

আহলে বাইতের মহব্বত লালন করাই আমার সম্বল
নবি পরিবাররই আমার মুক্তির ওয়াসিলা।
আশাকরি বিচারদিনে তাদের মহব্বতের জাযা হিসেবে
আমার আমলনামা আমার ডান হাতেই প্রদান করা হবে।

★|→ আলী রাদ্বিইয়াল্লাহু আনহুকে অনুসরণের প্রসঙ্গ টেনে বলেন-

قَالُوا: تَرَفَّضتَ قُلتُ: کَلَّا
مَا الَّرفضُ دینی وَ لا إعتِقادی
لکِن تَوَلَّیتُ غَیرَ شَکٍّ
خَیرَ إمَامٍ وَ خَیرَ هَادی
إن کَانَ حُبُّ الوَلِیِّ رَفضاً
فإنَّ رفَضِی الی العِباد

তারা প্রশ্ন করে আপনি কি রাফেযি হয়ে গেলেন? আমি বলি কক্ষনও না!
আমল কিংবা বিশ্বাসে রাফেজির বৈশিষ্ট্যের কিছুই আমার কাছে নেই।
তবে আমি একজনকে প্রশ্নাতীতভাবে অভিভাবক গ্রহণ করেছি–
যিনি শ্রেষ্ঠ ইমাম এবং শরীয়তের শ্রেষ্ঠ পথপ্রদর্শক।
যদি অভিভাবকের মহব্বত লালন হয়ে যায় রাফেজির কাজ!
তবেতো এমন বান্দার কাছে আমি বেশক রাফেজি!!

★ |→ নবি পরিবারের আলোচনা ও মুহাব্বাত-

إذا فی مجلس نذکر علیا
وسبطیه وفاطمة الزکیة
یقال۔ تجاوزوا یاقوم هذا
فهذا من حدیث الرافضیة
برٸت الی المهیمن من اناس
یرون الرفض حب الفاطیمیه

যখনই আমরা কোনো মজলিসে আলী রা.–
হাসান-হুসাইন, ফাতিমা রাদ্বিইয়াল্লাহুম আজমায়ীনের আলোচনা করি,
বলা হয়- ‘ হে সম্প্রদায়! তোমরা দীনের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছো,
আহলে বাইতের আলোচনা করা রাফিযিদের কাজ।’
আমি সেসব মানুষ থেকে আমার রক্ষক (আল্লাহ) এর নিকট নিজেকে মুক্ত পেশ করেছি,
যারা ফাতিমা রাদ্বিইয়াল্লাহু আনহার পরিবারের মহব্বতকে সীমালঙ্ঘন মনে করে!

★|→ নবি পরিবারকে হক্বসম্মত মুহাব্বাত করার জন্য রাফেযি অপবাদ তুচ্ছ জিনিস-
إن کانَ رَفضاً حُبُّ آلِ مُحمَّدٍ
فَلیَشهَدِ الثَّقَلانِ أنّی رَافضِی

যদি মুহাম্মাদ (সা.) এর পরিবারের মুহব্বতে রাফেযিদের কাজ হয় (সীমালঙ্ঘন) ,
তাহলে জীন-ইনসান সবে জেনে রাখো! অবশ্যই আমি এমন রাফেযি!

গ্রন্থপঞ্জি:
• দিওয়ানে ইমাম শাফেয়ি, তাহকীক মুহাম্মাদ ইবরাহীম সালীম, কায়রো, মিসর।

5/5 - (3 votes)