প্রশ্ন: হুজুর কিবলা অর্থ কি?
(এ প্রশ্নটা অনেকই করে থাকে সবার অবগতির জন্য এখানে তুরে ধরলাম)
উত্তরঃ হুজুর মানে জনাব বা মহাশয় ইত্যাদি। সম্মান জনক একটি শব্দ। আমি বুঝার জন্য আরো বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি- ‘‘হুজুর শব্দটির অর্থ হল, উপস্থিত হওয়া। তবে পরিভাষায় এটি বুযুর্গ ব্যক্তিদের সম্মানসূচক সম্বোধনের জন্য ব্যবহার করা হয়।’’ একই কথা উর্দু অভিধান ফীরুযুল লুগাত (পৃ. ৫৭১) এবং বাংলা অভিধান বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (পৃ. ১২১২) ও সংসদ বাংলা অভিধান (পৃ. ৭২৩) এ উল্লেখ করা হয়েছে।
উপরোল্লেখিত অভিধানগুলোর আলোকে একথাই স্পষ্ট হয় যে, হুজুর শব্দটি ফার্সী, উর্দু ও বাংলা ভাষায় নিছক একটি সম্মানসূচক শব্দ। আর এ অর্থেই এই তিন ভাষার অনেক মানুষ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্যও এটি ব্যবহার করে থাকে। শরয়ী পরিভাষা হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয় না। শব্দটি যেহেতু ব্যাপক তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য তা ব্যবহার করা হলে সাধারণত অধিক সম্মান বোঝানোর জন্য এর সাথে আকরাম শব্দ যোগ করে হুজুরে আকরাম বলা হয়। মোটকথা, হুজুর শব্দটি সম্মানসূচক বটে তবে এটি এমন কোনো শব্দ নয়, যা শুধু রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য ব্যবহৃত হয়। বরং তা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত একটি শব্দ। [গিয়াসুল লুগাত ১৭৪; ফীরুযুল লুগাত ৫৭১; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ৩/৩৪২]
অতএব সম্মানিত ব্যক্তিদের হুজুর বলে সম্বোধন করা হয়। কিবলা অর্থ কাবা শরীফ। হুজুর কিবলা মানে হচ্ছে এমন সম্মানিত ব্যক্তি যাদের কাছে গেলে কিবলার কথা মনে পড়ে। ক্বলব আল্লাহর কথা স্মরণ করে। অর্থাৎ কিবলা অনুসারী। আমি আরো স্পষ্ট করার চেষ্টা করছি—-
“ক্বিবলা” শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে “জিহাত বা দিক।” আর “কা’বা” শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে “মুরাব্বাউশ্ শাক্ল বা চতুস্কোন বিশিষ্ট ঘর” এবং উভয় শব্দ দ্বারা বাইতুল্লাহ্ শরীফকেও বুঝানো হয়ে থাকে। আর পারিভাষিক অর্থে ক্বিবলা ও কা’বা শব্দদ্বয় একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। তা হচ্ছে যার দিকে রুজু হয়। কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ক্বিবলা বা কা’বা হচ্ছে পাঁচ প্রকার। যথা-
(১) নামাযের ক্বিবলা হচ্ছে- “বাইতুল্লাহ্ শরীফ।” এজন্য বাইতুল্লাহ্ শরীফের দিকে মুখ করে নামায আদায় করতে হয়। (২) দোয়া বা মুনাজাতের ক্বিবলা হচ্ছে- “আসমান।” এজন্য হাতের তালুদ্বয় আসমানের দিকে করে মুনাজাত করতে হয়।
(৩) মাখলুকাতের ক্বিবলা হচ্ছেন- “আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” কেননা তিনি হলেন সৃষ্টির মূল, তাঁর উছীলায় সমস্ত মাখলুকাতের সৃষ্টি।
(৪) সমস্ত ক্বিবলাকে বিলীনকারী ক্বিবলা হচ্ছেন- “স্বয়ং আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন।”
(৫) ক্বিবলায়ে কুলূব বা কাল্বের ক্বিবলা হচ্ছেন- “পীর বা মুর্শিদ।”
যাঁর ফয়েজের মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত ও মা’রিফাতের ফয়েযে মুরীদ ফয়যিয়াব বা ফয়েযপ্রাপ্ত হয়, ক্বালব ও অন্যান্য লতিফাসমূহে যিকির জারী হয়। অতঃপর ক্বালব (অন্তর)সহ সমস্ত লতিফা পরিশুদ্ধ হয় এবং ইখলাছ পয়দা হয়। আর তখনই মুরীদের পক্ষে গায়রুল্লাহ্ মুক্ত হয়ে একমাত্র আল্লাহ্ পাক উনার জন্য ইবাদত করা সম্ভব।
অতএব, পীর বা মুর্শিদের নামের সাথে ক্বিবলা ও কা’বা শব্দ ব্যবহার করা শরীয়তসম্মত।
(১) ফতোয়ায়ে শামী
(২) দুররুল মুখতার
(৩) আইনুল ইয়াক্বীন