কুরবানির শিক্ষা হোক আমিত্ব পুজার জবাই করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের প্রতিজ্ঞা।

ইংরেজি তিন বর্ণে গঠিত একটি্ শব্দ EGO এটাকে এভাবে elaborate করলে আমরা বলতে পারি Evading Good of Others. or Ignoring Others. অর্থাৎ সবার স্বার্থ, সম্মান, ও অবস্থানকে অস্বীকার করে নিজের ভেতর একটা ফেইক ইমেজ তৈরি করা যে শুধু আমিই সব, আমার মত আমার পথই সঠিক। সবাই আমাকে প্রাধান্য দিক, যে যা করুক, আমাকে জিজ্ঞেস করা উচিত, আর না হয় আমি তাকে যে ভাবেই হোক প্রতিহত করব। সমাজে আমি নেতা, পরিবারে আমি কর্তা, আমি স্বামি,, আমি শাশুড়ি, আমি অমুক, আমি তমুক, এই যে আমি পুজা এটি মানুষের মারাত্বক মানসিক অসুস্থতা এবং স্বাভাবিক জীবন প্রক্রিয়া ধ্বংসকারি দানব। যে অদৃশ্য দানব ভেঙ্গে দেয় পারিবারিক সম্পর্ক, বন্ধু সমাজের সম্পর্ক, একটি সুন্দর সামাজিক জীবনের গতি। প্রিয় মানুষদের সাথে মধুর সম্পর্কগুলো অবহেলায়, অনাদরে পচে যায়, পচে যায় সমাজ, পচে যায় রাষ্ট্র।

এই জন্য আল্লাহ তায়ালা বলছেন আপনি কি তাকে দেখেন না, যে তারা প্রবৃত্তিকে বা আমিত্বকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন? আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা বোঝে ? তারা তো চতুস্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত” (আল-কুরআন, ২৫: ৪৩-৪৪)। সেই আমিত্বের পুজার কারনে মানুষ নিজেকে খুদার আসনে ভাবতে লাগল। যেমন ফেরাউন বলে উঠল فَقَالَ أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلَىٰ – সুরা আন-নাজিয়াত। আয়াত নং ২৪। অর্থ-আমি ই তোমাদের সবচেয়ে বড় রব।

এই আমিত্বের দানবকে ধ্বংস করে মহান রাব্বুল আলামিনের সামনে নিজেকে আত্মসমর্পণ করার প্রত্যয় হোক কোরবানির আসল স্পিরিট। জীবনের সকল কর্মকাণ্ড আমার ইচ্ছে মত নয় বরং আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় মহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর সা. এর পদ্ধতি অনুসরন করে অতিবাহিত করার শিক্ষা হোল কুরবানির শিক্ষা।
আল্লাহ পাক বলেনঃ-
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ() لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
অর্থাৎঃ- ‘বলো, আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের রব আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নেই। আর আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’ [সুরা-আনয়াম, ৬ : ১৬২-১৬৩] মানুষ যখন আমিত্বের গোলামীর জাল ছিন্ন করে আল্লাহ পাকের গোলামে পরিণত হয় গোটা সৃষ্টি জগত তার আপন মনে হয়। চিন্তা ও শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে সে আর আমি আমি ভাবে না। “আমি” তখন আমাদেরে পরিণত হয়। নিজেকে অতিমাত্রায় জাহির করার উন্মাদে পড়ে থাকে না। স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির এক অতুলনীয় সম্পর্ক মানুষের অন্তরে অনুভূত হয়। সে বুঝতে পারে স্রষ্টার দয়া পেতে হলে সৃষ্টিকে ভালবাসতে হবে।

আল্লাহর প্রেম উচ্ছ্বাসিত, উদ্বেলিত অন্তরে মানব কাল্যানের দায়িত্বানুভুতি জাগ্রত হয়। সেই মানুষটির দিল থেকে এক আধ্যাতিক আলোর বিস্ফুরণ ঘটে যা দিয়ে ব্যাক্তি সুন্দর হয়। পরিবার ও রাষ্ট্র আলোকিত হয়। সে নিজেকে আল্লাহর একজন ক্ষুদ্র সৃষ্ট জীব মনে করে। সত্য ও সুন্দরকে সে ভালোবাসে। অন্য মানুষের কোন উন্নতি ও সুখবরে আত্মা আনন্দ লাভ করে। না পাওয়ার হতাশা থেকে বেরিয়ে এসে সকল অবস্থায় আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকে বা ক্বাল্বে সালিমের অধিকারী হয়। যেমনটা আল্লাহ পাক হযরত ইব্রাহীম ও ইসমাইল আঃ সম্পর্কে বলেন ফালাম্মা আস্লামা ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺃَﺳْﻠَﻤَﺎ ﻭَﺗَﻠَّﻪُ ﻟِﻠْﺠَﺒِﻴﻦِ আয়াত নং ১০৩। সুরা আসসাফফাত। বাপ বেটা দুজনেই যখন আমি আল্লাহর ইচ্ছার সামনে সানন্দে আত্মসমর্পণ করলো। জবাই করার জন্য ও জবাই হবার জন্য মাথা পেতে দিল। আল্লাহ পাক বললেন, وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ – আয়াত নং ১০৭ অর্থ- আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু। وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ. আয়াত-১০৮ অর্থ : আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের জাতীর মধ্যে রেখে দিয়েছি শিক্ষা, ও সম্মান যে,. سَلَامٌ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ. আয়াত-১০৯ অর্থ : ইব্রাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ. আয়াত-১১০ অর্থ : এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।

আল্লাহ পাক আমাদেরকে অহংকার মুক্ত, ইমানি জিন্দেগী দান করুন। তার সালেহিন বান্দাদের কাতারে সামিল করুন। আমিন।

লেখা: মোঃ খালেদ হোসেন।
5/5 - (1 vote)