‘ঈদের রাত’: দুটি বরকতময় রজনী

হাদীসের প্রসিদ্ধ ছয় কিতাবের অন্যতম ‘সুনানু ইবনে মাজাহ’ শরীফে আছে, সাহাবি আবু উমামাহ রাদ্বিইয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন–
مَنْ قَامَ لَيْلَتَيْ الْعِيدَيْنِ مُحْتَسِبًا لِلَّهِ، لَمْ يَمُتْ قَلْبُهُ يَوْمَ تَمُوتُ الْقُلُوبُ
“যে ব্যাক্তি আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশায় ঈদের রাতে ইবাদত করবে, যেদিন সব অন্তর মারা যাবে, সেদিন তাঁর অন্তর মারা যাবে না (কিয়ামতের দিন সে ভয় পাবে না)।”


[সুনান ইবনে মাজাহ, কিতাবুস সিয়াম, বাব ফিমান ক্বামা ফি লাইলাতাইল ঈদাইন, হাদীস নং- ১৭৮২]

হাদীসটি দ্বয়ীফ। ফাদ্বায়েলে আমলের ক্ষেত্রে তা গ্রহণযোগ্য। এব্যাপারে হাদীসের নীতিশাস্ত্রের বিশিষ্ট পন্ডিত আল্লামা মুহিউদ্দীন নাবাভি রাহিমাহুল্লাহ (৬৭৬ হি.) হাদীস ও ইসলামি আইনশাস্ত্রের পন্ডিতগণের মূলনীতি তুলে ধরে বলেন-

يجوز ویستحب العمل في الفضائل والترغيب والترهيب بالحديث الضعيف، ما لم يكن موضوعاً
“দ্বয়ীফ হাদীস দ্বারা ফাদ্বায়েলে আমল, আমলের উৎসাহ প্রদান এবং ভীতিপ্রদর্শন করা জায়েজ এবং মুস্তাহাব (সাওয়াবের কাজ)। তবে মাউদ্বু তথা বানোয়াট প্রমাণিত হলে বৈধ হবে না।” [ ইমাম মুহীউদ্দীন আন নাবাবি (৬৭৬ হি.), আল আযকার, ২৭ পৃষ্ঠা]

শাফিয়ি মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু ইদ্রিস আশ শাফিয়ি রাহিমাহুল্লাহ (২০৪ হি.) বলেন, পাঁচটি রাতে দুয়া বেশি কবুল হয়। এর মধ্যে দুটি হল দুই ঈদের রাত। যেমন-

ﺇﻥ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﻳﺴﺘﺠﺎﺏ ﻓﻲ ﺧﻤﺲ ﻟﻴﺎﻝ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻻﺿﺤﻰ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﻭﺃﻭﻝ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻦ ﺭﺟﺐ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ
“নিশ্চয়ই পাঁচ রাতের দুয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়৷ এক) জুময়ার রাত, দুই) ঈদুল আদ্বহা বা কুরবানির ঈদের রাত, তিন) ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদের রাত, চার) রজব মাসের প্রথম রাত এবং পাঁচ) মধ্য শাবানের রাত তথা শবে বরাত।”

আলোচনার শেষে তিনি বলেন-

أستحب كل ما حكيت في هذه الليالي من غیر ان یکون فرضا

“আমি সেই সব রাত্রির ফযিলতের বর্ণনার আলোকে আমল করা মুস্তাহাব (উত্তম) মনে করি, তবে তা ফরজের অন্তর্ভুক্ত নয়।
[ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিস আশ শাফিয়ি (২০৪ হি.), আল উম্ম, অধ্যায়: সালাতুল ঈদাইন, পরিচ্ছেদ: আল ইবাদাতু লাইলাতাল ঈদাইন, ২/৪৮৫-৬]

উল্লেখিত হাদীস ছাড়াও ঈদের রাতের ফযিলতের উপর দ্বয়ীফ সনদের আরও কিছু বর্ণনা রয়েছে৷ এজন্য ফিকহি মাযহাবের সব উলামায়ে কেরামরা এই রাতকে ফজিলত পূর্ণ বলেছেন। তারা রমজান মাসের পর যেসকল রাত্রি বরকতময়, তারমধ্যে ‘ঈদের রাত’-কে অন্যতম বলে রায় দিয়েছেন। তাই আমাদের উচিত ঈদের খুশিতে এই বরকতময় রজনীতে কোনো ধরনের শরীয়াহ বিরোধী কাজে লিপ্ত না হওয়া এবং নেক আমলের মাধ্যমে আমাদের ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেওয়া!

লিখেছেন: মোহাম্মাদ ইমাদ উদ্দিন।

Rate this post