এতেকাফের শর্ত, প্রকারভেদ ও করণীয়:

এতেকাফের শর্ত গুলো হলো। ১. নিয়ত করা। ২. জামাত অনুষ্ঠিত হয় এমন মসজিদে এতেকাফ হতে হবে। ৩. ইতেকাফকারী রোজাদার হবে। ৪. জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমান স্ত্রী-পুরুষের জানাবাত ও মহিলারা হায়েজ-নেফাস হতে পাক হওয়া। ৬. পুরুষ লোক জামে মসজিদে ইতেকাফ করবে। ৭. সর্বদা হদসে আকবর থেকে পাক-পবিত্র থাকতে হবে।
ইতেকাফ ৩ প্রকার।
সুন্নাত ইতিকাফ : রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ। অর্থাৎ ২০ রমজানের সূর্য ডোবার আগ মুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করা। এ ধরনের ইতিকাফকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা কিফায়া বলা হয়। গ্রাম বা মহল্লাবাসীর পক্ষে কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি এই ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে। স্মরণ রাখতে হবে, উজরত অর্থাৎ বিনিময় বা পারিশ্রমিক দিয়ে কাউকে ইতেকাফে বসানো জায়েজ নয়। কেননা ইবাদতের উজরত দেওয়া ও নেওয়া উভয়ই শরিয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েজ (ফাতওয়ায়ে শামী)
ওয়াজিব ইতিকাফ: নজর বা মানতের ইতিকাফ ওয়াজিব। যেমন কেউ বলল যে, আমার অমুক কাজ সমাধা হলে আমি এত দিন ইতিকাফ করব অথবা কোনো কাজের শর্ত উল্লেখ না করেই বলল, আমি এত দিন অবশ্যই ইতিকাফ করব। যত দিন শর্ত করা হবে তত দিন ইতিকাফ করা ওয়াজিব। ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। সুন্নাত ইতিকাফ ভঙ্গ করলে তা পালন করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
নফল ইতিকাফ: সাধারণভাবে যেকোনো সময় ইতিকাফ করা নফল। এর কোনো দিন কিংবা সময়ের পরিমাপ নেই। অল্প সময়ের জন্যও ইতিকাফ করা যেতে পারে। এ জন্য মসজিদে প্রবেশের আগে ইতিকাফের নিয়ত করে প্রবেশ করা ভালো। জাহের রেওয়ায়েত মতে, নফল ইতেকাফকারীর জন্য রোজা শর্ত নয়। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর মতে, নফল ইতেকাফকারীর জন্যও রোজা রাখা শর্ত।
যদি কেউ রোজা ব্যতীত এক মাস ইতেকাফ মান্নত করে, তার প্রতি রোজা ব্যতীত এক মাস এতেকাফ ওয়াজিব হবে। যদি কেউ রমজান মাসে এতেকাফের মান্নত করে তাহলে ভিন্নভাবে রোজা রাখার প্রয়োজন নেই। কিন্তু রমজান মাসে মান্নত আদায় না করলে পরবর্তী সময়ে রোজার সঙ্গে ওই ইতেকাফ আদায় করতে হবে। স্ত্রী অথবা ক্রীতদাস-দাসী এতেকাফের মান্নত করলে স্বামী অথবা মনিব তা নিষেধ করার মত রাখেন।
নারীরা ঘরের যে স্থান ইতেকাফের জন্য নির্দিষ্ট করবেন,সে স্থানটি ইতেকাফকালীন তার জন্য মসজিদের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে। ইসলামী শরিয়তের কোনো প্রয়োজন ছাড়া সেখান থেকে সরে যাওয়া জায়েজ হবে না। সে স্থানটির নির্দিষ্ট সীমার বাইরে, ঘরের অন্য অংশেও যেতে পারবেন না। নির্দিষ্ট সীমার বাইরে চলে গেলে ইতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। ইতেকাফে নবীয়ে করিম (সা.)-এর বিশেষ আকর্ষণ ছিল। তিনি প্রতি বছর রমজান মাসের ইতেকাফের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করতেন। তিনি কখনো পুরো রমজান মাস ইতেকাফ করেছেন। দশ দিনের ইতেকাফ তো তিনি প্রতি বছর অবশ্যই করতেন। একবার বিশেষ কারণে রমজান শরিফে ইতেকাফ করতে পারেননি, তাই শাওয়াল মাসে দশ দিন রোজা রেখে তিনি ইতেকাফ করেছেন (-বুখারি শরিফ)।

ইতেকাফকালীন অবস্থায় বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করার পাশাপাশি নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার, দোয়া-দরূদ, দান-সদকা ইত্যাদি নফল আমলের প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। ইতেকাফকারীদের জন্যএগুলো করণীয় কারো সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ ও অনর্থক গল্প-গুজব বা বেহুদা কথাবার্তা বলে সময় নষ্ট করা উচিত নয়। দুনিয়াবি কোনো লেনদেন না করার পাশপাশি বিনা প্রয়াজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া অনুচিত। ইতেকাফকারীদের জন্য এগুলো বর্জনীয়।

লেখা: আহমাদ আমিন (তামীম)

Rate this post