এতেকাফের ফযিলত ও গুরুত্ব

সময় পেরিয়ে চলে এল নাজাতের মাসের বিদায়ক্ষন। রমজানের শেষ দশকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলত পূর্ণ ইবাদাত হলো এতেকাফ। রাসুল ﷺ প্রতি বছর রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন। এতেকাফ কারীর দৃষ্টান্ত হলো ঐ ব্যক্তির মত, যে কারো দরজায় গিয়ে পড়ে রইলো আর বলতে থাকলো যে, আমার দরখাস্ত মঞ্জুর না হওয়া পর্যন্ত আমি যাবো না। প্রকৃতপক্ষে কারো অবস্থা যদি এমনই হয় তবে চরম নিষ্ঠুর হৃদয়ও না গলে পারে না। আর আল্লাহ তায়ালা তো অসীম দয়াবান, তিনি তো দেয়ার জন্য বাহানা তালাশ করেন। বরং কোন বাহানা ছাড়াই দেন।
এতেকাফ শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে স্থির থাকা, আবদ্ধ থাকা, অবস্থান করা। শরিয়তের পরিভাষায় নির্ধারিত সময়ে সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে পার্থিব ও জাগতিক সব ধরনের সংস্পর্শ ত্যাগ করে মসজিদে অবস্থান করাকে এতেকাফ বলে। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানে দশ দিন এতেকাফ করবে তার আমল দুই হজ ও দুই ওমরার সমতুল্য। (শুআবুল ইমান, হাদিস নং-৩৬৮১; কানযুল উম্মাল, হাদিস নং-২৪০০৬)। রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করা সুন্নতে মোয়াক্কাদায়ে কেফায়া। অর্থাৎ এলাকার কিছুসংখ্যক মানুষ আদায় করলেই সকলের পক্ষ থেকে সুন্নতে কেফায়া আদায় হয়ে যাবে। তবে কেউই আদায় না করলে সকলেই গুনাহগার হবে।
এতেকাফের একটি বৈশিষ্ট্য হলো যতক্ষণ মানুষ এতেকাফ অবস্থায় থাকে তার চলাফেরা, কথাবার্তা, পানাহার, ঘুম, প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। এতেকাফকারী লাইলাতুল কদরের মর্যাদা লাভ করতে পারবেন। লাইলাতুল কদরের ইবাদত হাজার মাস তথা তিরাশি বছর চার মাস ইবাদত করার চেয়েও উত্তম। সুতরাং যে ব্যক্তি শেষ দশকে এতেকাফ করবে তার প্রতিটি মুহূর্ত যেহেতু ইবাদত হিসেবে গণ্য হচ্ছে ফলে সে লাইলাতুল কদর পেয়ে যাচ্ছেন, এ রাতের সুমহান মর্যাদা লাভ করতে পারছেন। রাসুল (সা.) লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির আশা নিয়েই এতেকাফ করতেন। তিনি প্রথম দশকেও এতেকাফ করেছেন, মধ্য দশকেও করেছেন, এরপর শেষ দশকে করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি প্রথম দশকে এতেকাফ করেছি, লাইলাতুল কদর তালাশ করেছি, এরপর মধ্য দশকে এতেকাফ করেছি, এরপর আমাকে তা দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, তা শেষ দশকে। অতএব তোমাদের মধ্যে যার এতেকাফ করা পছন্দ হয় সে যেন এতেকাফ করে। এরপর সাহাবায়ে কেরাম তার সঙ্গে এতেকাফ করলেন। তিনি আরো বলেন, আমি তা বিজোড় রাতে পেয়েছি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৮২৮)। আর এতেকাফ সুন্নত হওয়ার হেকমত হলো এটাই যে, এতেকাফ ছাড়া লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও মর্যাদা লাভের নিশ্চিত কোনো পদ্ধতি নেই।
হযরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) রমজান মাসের শেষ দশকে মসজিদে এতেকাফ করতেন। তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এ আমল অব্যাহত রেখেছেন। তার ইন্তেকালের পর তার স্ত্রীরা এতেকাফ করেছেন। (সহিহ বোখারি, হাদিস নং-১৯২২)। অতএব এই ফযিলত পূর্ণ রজনী পাওয়ার জন্য এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এতেকাফের বিকল্প নেই।
সর্বপোরি মহান আল্লাহ আমাদের এই লাইলাতুল কদর মর্যাদা দান করুন। এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করে জান্নাতের বাসিন্দা হিসেবে কবুল করে নিন। সেই লক্ষে আল্লাহ আমাদের এতেকাফে বসার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখা: আহমাদ আমিন (তামীম)
Rate this post