তাযকিয়া সম্পর্কিত আরবী, বাংলা ও ইংরেজী বই সমূহ।

অজানাকে জানা ও অচেনাকে চেনার যে চিরন্তন আগ্রহ, তা বই পড়ে মেটানো যায়। একটি ভালো বই-ই হচ্ছে মনের পুষ্টি যোগানোর অন্যতম উপায়। বই মানুষের জ্ঞানের পরিধি বাড়ায়। একটি ভালো বই ঘুমন্ত বিবেক জাগিয়ে তোলে। বই জ্ঞানের প্রতীক, বই আনন্দের প্রতীক। জ্ঞান আর আনন্দ ছাড়া মানব জীবন নিশ্চল হয়ে পড়ে। জীবনকে সুন্দরভাবে বিকশিত করতে হলে, সুবাসিত করতে হলে জ্ঞানার্জন করতে হবে। আর জ্ঞানার্জন করতে হলে বই পড়ার কোনো বিকল্প নাই। পৃথিবীর যাবতীয় জ্ঞানের কথা যেন বইয়ের মাঝে লুকিয়ে আছে। তাই জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করতে হলে বই পড়তেই হবে। নিজেকে জানতে হলে, পৃথিবীকে জানতে হলে বই পড়তে হবে।

আকিদা তাফসির হাদিস

 

ফিকহ তাসাউফ গবেষণা কর্ম

 

সীরাতে রাসুল ﷺ

 

 

তাযকিয়া হচ্ছে আত্নোন্নতির নিমিত্তে এমন একটি মানবীয় কাজ এবং অর্জিত প্রচেষ্টা যা অসৎকাজের পরিহার এবং সৎকাজের বাস্তবায়নে সহযোগীতা করে। এর অপর নাম নফসের সাথে জিহাদ কিংবা নফসের যাকাত। সেই হিসেবে তাযকিয়ায়ে নফস দ্বারা নফসের সংশোধন, নফসের উন্নতি ও প্রবৃদ্ধিও বুঝায়। এটি একটি বাস্তবমুখী,প্রযোজ্য,এবং ভারসাম্যপূর্ণ প্রক্রিয়া। যা কুরআন সুন্নাহ্ এবং সাহাবাদের জীবন পদ্ধতি থেকে উৎকলিত।

ইসলামের একত্ববাদগ্রহণ পূর্বক আল্লাহর নির্দেশাবলী মেনে চলা ও আমলে সালেহর মাধ্যমে নফসের পরিশুদ্ধি অর্জন তখা মানুষের হৃদয়লোককে আলোকিত করার এ প্রয়াস ছিল রাসুলে কারীম সা: এর। কোরআনের পরিভাষায় এই কর্ম পন্থার নাম ছিল তাযকিয়ায়ে নফ্স।

সময়ের বিবর্তনের সাথে আত্মশুদ্ধির পথে সাধনা করতে গিয়ে পাওয়া যায় কোরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত পথ থেকে বিচ্যুৎ হওয়ার ঘটনাও। এই বিচ্যুতির কারণ ঈমানী শক্তির অবক্ষয়। প্রত্যেকের জীবনেই কোন না কোন ভুল-ভ্রান্তি ও দোষ-ত্রুটি আছে। একমাত্র নবী-রাসূল ছাড়া কেউ নিষ্পাপ ও দোষমুক্ত নয়। কাজেই নিজেকে পাপমুক্ত করা, কলুষমুক্ত করা ও আল্লাহর অনুগত বানানো প্রত্যেক ঈমানদার মানুষেরই একান্ত কর্তব্য। যা ব্যাতীত আখেরাতের সফলতা আশা করা যায় না।

আল্লাহ বলেন-
“যে ব্যাক্তি নিজেকে পুত-পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করল সেই সাফল্য লাভ করল; আর যে ব্যাক্তি নিজেকে কলুষিত করল, সে ধ্বংস হয়ে গেল।”
“সে ব্যাক্তিই সফল হয়েছে, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে এবং তার রবের নাম স্মরণ করে; অতপর নামায পড়ে।”

আবার তাযকিয়ায়ে নফসের প্রসঙ্গে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (স.) ফরমান, মানুষের হৃদয়ে মরিচা পড়ে। যেমন পানির সংস্পর্শে লোহায় মরিচা পড়ে। সহাবাগণ রসূল (স.)কে জিজ্ঞেস করলেন, তা হলে ‘কলব’ পরিষ্কারের উপায় কী? রসূল (স.) জবাব দিলেন, ,মৃত্যুকে স্মরণ এবং অধিক মাত্রায় কোরআন তেলাওয়াত। মৃত্যু চিন্তা মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে সক্ষম। শুধু মাত্র মৃত্যু চিন্তা নয়, বরং মৃত্যু চিন্তার সাথে দুনিয়ার জিন্দেগীকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কোরআনের কাছে ফিরে আসতে হবে।

সুতরাং বলাবাহুল্য প্রত্যেক ব্যক্তিরই ক্বলব বা অন্ত:করণ রয়েছে। এই অন্ত:করণের প্রধান রোগ হচ্ছে, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, লোভ, অহংকার, হিংসা ও কৃপণতা। যদি মানুষকে শুধুমাত্র তাকওয়ার প্রবণতাই দেয়া হত তা হলে বনি আদম আল্লাহর সৃষ্ট অন্যান্য জীবের মতই হত, যাদের স্বাধীনভাবে কোন কিছু করার ক্ষমতা নেই। আর তার ফলে আল্লাহর ইচ্ছা মানুষ তার খলিফা হিসেবে দুনিয়ায় জীবন যাপন করতে সক্ষম হত না। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, “মানুষের সৃষ্টি হয়েছে বিবর্তনের এক ধারা বেয়ে এবং এ সৃষ্টিতে অন্ধ কোন গতি নেই। এর মূল উদ্দেশ্য হল এ জগতে আল্লাহর প্রতিনিধির উপস্থিতি। মানুষের জীবনে রয়েছে ইচ্ছার স্বাধীনতা এবং মানুষ তার কর্মের দ্বারা আল্লাহর প্রতিনিধি হতে পারে। এ জন্য মানুষের অমরত্ব লাভ মানুষের আয়ত্বের মধ্যে। কোন মানুষই জন্মগত ভাবে অমর নয়, তাকে সাধনা করে অমরত্ব লাভ করতে হবে।”

যেমনটি মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন- “শপথ প্রাণের এবং তার যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন, অতঃপর তাকে তার অসৎ কর্ম ও সৎ কর্মের জ্ঞান দান করেছেন। যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয় এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।” তাই কোন অন্ধ পথে নয় বরং আল্লাহর দেখানো পথ ধরে সাধনা করেই মানুষ খলিফার মর্যাদা এবং দুনিয়া ও আখেরাতে শ্রেষ্ঠত্বের শীর্ষে আরোহন করতে পারে। সেই সহজ সঠিক ও শূদ্ধতম পথ দেখানের জন্য আল্লাহ পাঠিয়েছেন তার প্রিয় রসূল হজরত মুহাম্মদ (স.)। রসূল (স.)কে যে দায়িত্ব দিয়ে পাঠান হয়েছিল তার অন্যতম ছিল তাজকিয়া। কোরআনে বার বার ইরশাদ য়েছে যেমন-

“যেমন আমি তোমাদের প্রতি স্বয়ং তোমাদের মধ্য হইতে এক জন রসূল পাঠাইয়াছি, যে তোমাদিগকে আমার আয়াত পড়িয়া শুনায়, তোমাদের জীবন পরিশুদ্ধ ও উৎকর্ষ করিয়া তোমাদিগকে কিতাব ও হিকমাতের শিক্ষা দেয় ; এবং যে সব কথা তোমাদের অজ্ঞাত তাহা তোমাদিগকে জানাইয়া দেন।”

সুতরাং সময়ের এই ক্লান্তি লগ্নে যখন আমাদের ঈমানের দৃঢ়তা কচু পাতার পানির ন্যায় টলমলে। ধর্ম যখন ব্যক্তি, বিভিন্ন মতাবাদ, মতাদর্শ, রাজনৈ্তিক স্বার্থ ও কুসংস্কার, অপব্যাখ্যা ও অপপ্রচারের স্বীকার। জাতির এই সংকট পূর্ণ মূহুর্তে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার ঐশী বাণী ও আধ্যাত্বিকতার পয়গাম সহজলব্ধ ভাষায় তুলে ধরার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত “আত তাযকিয়া” পরিবার।

Rate this post