কুসুফ ও খুসুফের নামায বা সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের নামায
সূর্যগ্রহণকে বলা হয় كسوف (কুসুফ) আর চন্দ্রগ্রহণকে বলা হয় خسوف (খুসুফ )
সূর্যগ্রহণের নামাযকে বলা হয় صلاة كسوف الشمس আর চন্দ্রগ্রহণের নামাযকে বলা হয় صلاة خسوف القمر
সূর্যগ্রহণের নামায:
——————–
সূর্যগ্রহণের নামায ২ রাকাআত। অন্য সাধারণ নামাজের মতই এই নামায আদায় করতে হয়।প্রতি রাকাআত অনেক দীর্ঘ করে পড়তে হয়। সম্ভব হলে গ্রহণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ করা।এই নামাযের সুরাগুলো যত বেশি সম্ভব দীর্ঘ পড়া উচিত। এ নামাযে আজান ও ইকামত নেই। নিষিদ্ধ ও মাকরূহ ওয়াক্ত ব্যতিত মসজিদে এই নামায জামাআতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নাত। দিনের বেলায় সূর্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। আর দিনের নামায হওয়ার কারণে কেরাত আস্তে পড়াই নিয়ম।
সাহাবি হযরত জাবির ইবনে সামুরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي كُسُوفِ الشَّمْسِ رَكْعَتَيْنِ، لَا نَسْمَعُ لَهُ فِيهِمَا صَوْتًا.
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে ২ রাকাত সূর্যগ্রহণের নামায পড়লেন, কিন্তু উভয় রাকাতে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো আওয়াজ শুনি নাই। (আবু দাউদ: ১১৮৪, নাসাঈ: ১৪৮৪, তিরমিযী: ৫৬২, ইবনে মাজাহ: ১২৬৪)
كُنْتُ إِلَى جُنُبِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ كُسِفَتِ الشَّمْسُ، فَلَمْ أَسْمَعْ لَهُ قِرَاءَةً.
অর্থ: আমি সূর্যগ্রহণের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাশে দাঁড়িয়েছি (নামায আদায় করেছি), কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিরাত শুনি নি। (তাবারানী: ১১৬১২)
এখান থেকে বোঝা গেলো সালাতুল কুসুফে কিরাত আস্তে হবে। তবে সশব্দে কিরাত পড়াও জায়েয আছে।
সূর্য গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত এ নামায পড়া সুন্নাত। তবে সূর্যগ্রহণ শেষ হওয়ার আগে নামায শেষ করলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে সূর্যগ্রহণ চলাকালীন বাকি সময়টুকতে জিকির, দোয়া, তাওবা-ইসতেগফা, দান-সাদকার মাধ্যমে কাটানো উত্তম।
চন্দ্রগ্রহণের নামায:
——————–
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে চন্দ্রগ্রহণের নামাযও প্রমাণিত রয়েছে। তবে হানাফী মাযহাব মতে সালাতুল খুসুফ জামাতের সঙ্গে নয়, বরং একাকি নিজ ঘরে পড়াই নিয়ম। তাই চন্দ্রগ্রহণের সময় আমাদেরও নিজ নিজ ঘরে একাকি চন্দ্রগ্রহণের নামায আদায় করা উচিত এবং এটা সুন্নাতও।
ﺃَﻣَّﺎ ﻓِﻲ ﺧُﺴُﻮﻑِ ﺍﻟْﻘَﻤَﺮِ ﻓَﻴُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻓِﻲ ﻣَﻨَﺎﺯِﻟِﻬِﻢْ؛ ﻟِﺄَﻥَّ ﺍﻟﺴُّﻨَّﺔَ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺃَﻥْ ﻳُﺼَﻠُّﻮﺍ ﻭُﺣْﺪَﺍﻧًﺎ
অর্থ: চন্দ্রগ্রহণের সময় ঘরে নামায আদায় করা হবে। কেননা সুন্নাহ হচ্ছে, তখন একাকি নামায পড়া। (বাদায়েউস সানায়ে’: ১/২৮২)
সূর্যগ্রহণের সময় নারীদের করণীয়:
————————————
নারীরাও সূর্যগ্রহণের সময় ঘরে একাকি নামায আদায় করবেন। নামায শেষে জিকির, দোয়া, তাওবা-ইসতেগফার, দান-সাদকার মাধ্যমে কাটানো উত্তম।
গর্ভবতী মহিলাদের উপর চন্দ্র ও সূর্য গ্রহনের প্রভাব:
——————————————————
কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী সূর্য গ্রহন ও চন্দ্র গ্রহনের কোন প্রভাব গর্ভবতী মা, বা তার গর্ভস্থ ভ্রুনের উপর পড়ে না। গর্ভবতী মা কোন কিছু কাটলে, ছিঁড়লে বাচ্চা ঠোঁট কাটা জন্মাবে, কোন কিছু ভাঙলে, বাঁকা করলে সন্তান বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নেবে – এধরনের যত কথা প্রচলিত আছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা, যার সাথে কুরআন ও সুন্নাহর কোন সম্পর্ক নেই।
লেখা: সৈয়েদ হাসান আল-আযহারী।