যিলহজ্ব মাসে ঈদেরদিন পর্যন্ত নখ-চুল না কাটা

যিলহজ্ব মাসের মর্যাদা এবং এই মাসের নেক আমলের জাযা অনেক বেশি। বিশেষকরে প্রথম দশদিন। মুসলমানরা এই মাস সাধ্যমত নেক আমলের আধিক্যতা দিয়ে অতিবাহিত করেন। এমাসের সবচেয়ে বড় আমল হল ইসলামের ফরজ আদেশের অন্তর্ভুক্ত হজ্ব সম্পাদন করা। আরেকটি ওয়াজিব ও অনেক সাওয়াবের আমল হল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কুরবানি করা৷। তবে যারা হজ্ব করতে পারেন না বা সামর্থ্য রাখেন না কিন্তু কুরবানি দেন অথবা কুরবানি দেয়ারও সামর্থ্য রাখেন না, উভয়ের জন্য হজ্বকারীদের আমলের সাথে মিল রেখে আমল করার সুযোগ রয়েছে। যেমন, হজ্বকারীরা ইহরাম বাধার পর হাতের নখ, সকল চুল/লোম কাটা থেকে বিরত থাকেন, তেমনিভাবে ব্যক্তি হাজ্বীদের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে নখ, চুল, দাড়ি, মুচ এবং বিশেষ অঙ্গের অবাঞ্চিত লোম কাটা থেকে বিরত থাকবে। এই আমল করার জন্য রাসূল ﷺ নির্দেশনা রয়েছে। যারা কুরবানি দেন তাদের ব্যাপারে তিরমিযি শরীফে বর্ণিত হাদীস—

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَال:َ مَنْ رَأَى هِلَالَ ذِي الْحِجَّةِ وَأَرَادَ أَنْ يُضَحِّيَ فَلَا يَأْخُذَنَّ مِنْ شَعْرِهِ وَلَا مِنْ أَظْفَارِهِ

উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামাহ রাদ্বিইয়াল্লাহ আনহা রাসূল ﷺ হতে বর্ণনা করেন। রাসূল ﷺ বলেন: যে ব্যক্তি যিল’হজ্ব মাসের নতুন চাঁদ দেখল এবং কুরবানি দেয়ার ইচ্ছা করল, সে যেন তার কোনো চুল ও নখ না কাটে।
[জামে তিরমিযি, কিতাবুল আদ্বাহিয়্যাহ, হাদীস নং- ১৫২৩। ইমাম তিরমিযি হাদীসটি সহীহ বলেছেন।]

 

আর যাদের উপর কুরবানি ওয়াজিব হয় নাই তথা কুরবানি দেন না, তাদের ব্যাপারেও এই আমল করার কথা বলা হয়েছে। যিনি এই আমল করবেন তিনি কুরবানির মত ফদ্বিলতপূর্ণ আমলের বিকল্প হিসেবে এই আমলটি সম্পাদন করতে পারেন। যেমন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِرَجُلٍ: أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى عِيدًا جَعَلَهُ اللَّهُ لِهَذِهِ الْأُمَّةِ»، فَقَالَ الرَّجُلُ: أَفَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ أَجِدْ إِلَّا مَنِيحَةَ أُنْثَى، أَفَأُضَحِّي بِهَا؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنْ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِكَ، وَتُقَلِّمُ أَظْفَارَكَ، وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ، وَتَقُصُّ شَارِبَكَ، فَذَلِكَ تَمَامُ أُضْحِيَتِكَ عِنْدَ اللَّهِ

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল আস রাদ্বিইয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ’র এক ব্যক্তিকে বললেন: আমাকে কুরবানির দিনকে ঈদের দিন হিসেবে প্রদান করা হয়েছে, যা আল্লাহ্‌ তায়ালা এই উম্মতের (উম্মাতে মুহাম্মাদি) জন্য নির্ধারণ করেছেন। অতঃপর সে ব্যক্তি রাসূল ﷺ-কে বলল: আপনার কী সিদ্ধান্ত, আমার একটিমাত্র জীবিকানির্বাহকারী পশু রয়েছে, আমি কি এ পশুই কুরবানি দিব? রাসূল ﷺ তাকে বললেন: না, বরং তুমি কুরবানি হিসেবে তোমার মাথার চুল, নখ, তলপেটের চুল এবং গোফ কাটবে। এটিই তোমার পূর্ণ কুরবানি হিসেবে আল্লাহ তায়ালার কাছে গণ্য হবে। [সহীহ ইবনে হিব্বান: হাদীস নং- ৫৯১৪, শায়খ শুয়াইব আরনাউতের তাহকীকে হাদীসটি সহীহ।]

সুতরাং, এমাসে সাধ্যমত বেশি বেশি নেক আমল করার পাশাপাশি যারা কুরবানি দেন অথবা দিতে পারেন না, সবার জন্য হাদীসের আলোকে যিলহজ্ব মাসের প্রথম থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত দাড়ি-গোঁফ, যাবতীয় চুল/লোম ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব আমলের অন্তর্ভূক্ত। এতে করে আল্লাহর মেহমান হাজী সাহেবানদের সাথে সামঞ্জস্যতা রাখা এবং ঈদেরদিন চুল-নখ কেটে কুরবানি দেয়ার সাওয়াব হাসিল করা সম্ভব হবে। ইনশাআল্লাহ!

প্রসঙ্গত, হিজরী তথা চন্দ্রনির্ভর বর্ষপঞ্জিতে নতুন দিনের গণনা শুরু হয় সবচেয়ে আগে সূর্যাস্তের পরপরই। এজন্য মাগরিব থেকেই নতুন তারিখ শুরু হয়।
লিখেছেন: মোহাম্মাদ ইমাদ উদ্দিন।
Rate this post